পশ্চিমবঙ্গ, আমাদের এই রাজ্যটি বর্তমানে ২৩টি জেলা নিয়ে গঠিত। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, যে জেলায় আমাদের বাস, তার নামটি কোথা থেকে এলো? প্রতিটি জেলার নামের পেছনেই লুকিয়ে আছে নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। 📜 দেশভাগের সময় থেকে আজ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র অনেক বদলেছে। ১৯৪৭ সালে যেখানে মাত্র ১৪টি জেলা ছিল, আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩টিতে। চলুন, আজ পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলার নামকরণের রহস্যময় ইতিহাসে ডুব দেওয়া যাক। 🧭
১. দার্জিলিং 🏔️
"পাহাড়ের রানী" দার্জিলিং নামটি এসেছে তিব্বতীয় শব্দ 'দোরজে-লিং' থেকে। 'দোরজে' কথার অর্থ বজ্র এবং 'লিং' কথার অর্থ স্থান। অর্থাৎ, দার্জিলিং নামের আক্ষরিক অর্থ হলো 'বজ্রপাতের দেশ'। এখানকার আবহাওয়ার জন্যই হয়তো এই নামকরণ।
২. আলিপুরদুয়ার 🌳
এই নামটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - 'আলিপুর' এবং 'দুয়ার'। কর্নেল হেদায়েত আলি খানের নামানুসারে 'আলিপুর' নামটি এসেছে। আর 'দুয়ার' শব্দটি ভুটানের প্রবেশদ্বার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, আলি সাহেবের শহর যা ভুটানের প্রবেশদ্বার।
৩. কোচবিহার 👑
নামটি শুনলেই বোঝা যায়, এটি কোচ রাজবংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। 'কোচ' হলো এখানকার এক প্রাচীন নৃগোষ্ঠীর নাম এবং 'বিহার' বলতে বোঝায় বাসস্থান বা বিচরণভূমি। অর্থাৎ, কোচবিহার নামের অর্থ 'কোচ জাতির বাসস্থান'।
৪. মালদা 🥭
মালদা নামটি নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। একটি জনপ্রিয় মত অনুসারে, আরবি শব্দ 'মাল' (ধনসম্পদ) এবং বাংলা 'দহ' (গভীর জলাশয়) মিলে তৈরি হয়েছিল 'মালদহ', যা পরে মালদা নামে পরিচিত হয়। একসময় এটি এক সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল।
৫. মুর্শিদাবাদ 🕌
বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খানের নামানুসারে এই জায়গার নাম হয় মুর্শিদাবাদ। তিনি বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে এখানে স্থানান্তর করেছিলেন। 'আবাদ' একটি ফারসি শব্দ, যার অর্থ বাসস্থান বা শহর। সুতরাং, মুর্শিদাবাদ মানে 'মুর্শিদের শহর'।
৬. বীরভূম ⚔️
'বীরদের ভূমি'—এটাই বীরভূম নামের সহজ অর্থ। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, ১৩শ শতকে রাজা বীর মল্ল এই অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। তাঁর নাম থেকেই 'বীরভূম' নামটি এসেছে বলে মনে করা হয়। আবার সাঁওতালি ভাষায় 'বীর' শব্দের অর্থ জঙ্গল, তাই 'বীরের ভূমি' বা 'জঙ্গলের ভূমি'—দুই অর্থই হতে পারে।
৭. বর্ধমান 🌾
ঐতিহাসিকদের মতে, জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর বর্ধমান এই অঞ্চলে ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন। তাঁর নামানুসারেই এই সমৃদ্ধ জনপদের নাম হয় 'বর্ধমান'। এর আরেকটি অর্থ হলো 'সমৃদ্ধিশালী' বা 'ক্রমবর্ধমান'।
৮. কলকাতা 🌆
কলকাতা নামের উৎস নিয়ে একাধিক মত प्रचलित। সবচেয়ে জনপ্রিয় মতটি হলো, এটি 'কালীক্ষেত্র' কথাটি থেকে এসেছে। कालीघाट-এর কালী মন্দিরের কারণেই এই অঞ্চলকে কালীক্ষেত্র বলা হতো, যা ইংরেজদের উচ্চারণে 'ক্যালকাটা' এবং পরে 'কলকাতা' হয়। অন্য একটি মত অনুযায়ী, 'খাল কাটা' কথাটি থেকেও কলকাতা নামের উৎপত্তি হতে পারে।
এইভাবেই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোনও না কোনও ইতিহাস। আপনার জেলার নামকরণের পেছনে যদি অন্য কোনও লোককথা বা ইতিহাস জানা থাকে, তবে অবশ্যই আমাদের জানান! 🗺️✨